সম্পাদকীয়|Editorial
DOI:
https://doi.org/10.58666/iab.v21i81.301Keywords:
সম্পাদকীয়,, EditorialAbstract
[সম্পাদকীয়]
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৮১তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এবারের সংখ্যায় সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে পাঁচটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
শুরুতেই রয়েছে “ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়নে দারুরাহ ও হাজাহ নীতির প্রয়োগ : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধ। আধুনিক বিশ্বে অর্থের নিরাপদ সংরক্ষণ, মূলধন সঞ্চিতকরণ এবং বৈদেশিক লেনদেনে ব্যাংকিং ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে অর্ধশতাব্দী আগে যাত্রা শুরু করা ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি সুদমুক্ত নৈতিক বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের সুপ্রতিষ্ঠিত কাঠামো ও তীব্র প্রতিযোগিতার সাথে তাল মেলাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে অনেক সময় শরীআহর গৌণ নীতি যেমন দারুরাহ (অত্যাবশ্যকতার নীতি) এবং হাজাহ (জরুরি প্রয়োজনের নীতি)-এর আশ্রয় নিতে হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে এই দারুরাহ ও হাজাহ নীতির প্রাসঙ্গিকতা যেমন বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তেমনি সমসাময়িক ব্যাংকিং চ্যালেঞ্জে শরীআহসম্মত সমাধানের পথও দেখানো হয়েছে। প্রবন্ধের মাধ্যমে পাঠক অনুধাবন করতে পারবেন যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে টেকসই ভূমিকা রাখার জন্য শুধু বাহ্যিক প্রতিযোগিতা নয় বরং অভ্যন্তরীণ আদর্শিক দৃঢ়তাই হওয়া উচিত ইসলামী ব্যাংকিং- এর অগ্রগতির প্রধান চালিকা শক্তি। সেই সাথে ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শন কেবল বিকল্প নয় বরং একটি কার্যকর পন্থা এমন উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে ইসলামী ব্যাাংকিং এর নীতি, কৌশল ও কাঠামোর পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ আমল থেকেই কওমি মাদরাসা উপমহাদেশের ইসলামী জ্ঞানগত সিলসিলা ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোতে সময়ের আবর্তনে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমাজের মূল ধারার সাথে সমন্বয় করার কাজ অনেকদুর এগিয়ে গেছে। দুঃখজনক বাস্তবতা হল, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। “কওমি সনদের যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির বাস্তবায়ন: একটি প্রায়োগিক প্রস্তাবনা” শীর্ষক প্রবন্ধটিতে ২০১৭ সালে সরকার প্রদত্ত কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি ও এর প্রায়োগিক বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। পাঠক এই প্রবন্ধের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারবেন যে, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে কওমি সনদের যথাযথ স্বীকৃতির মাধ্যমেই সম্ভাবনাময় বিশাল সংখ্যক মেধাবী ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সমন্বিত জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
‘ইসতিসলাহ’ ইসলামী আইনশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা, যার মাধ্যমে এমন কোনো বিষয়কে শরিয়তের বিধান নির্ধারণে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়, যা শরিয়তে স্পষ্টভাবে অনুমোদিত বা নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু যেটি সর্বজনীন কল্যাণ বা জনস্বার্থ রক্ষায় সহায়ক। “ইসলামী আইনে ইসতিসলাহ-এর মর্যাদা ও প্রয়োগ: একটি বিশ্লেষণ” শীর্ষক প্রবন্ধে ইসতিসলাহ পদ্ধতির সংজ্ঞা, এর শর্তাবলি, প্রাচীন ও সমকালীন ফকীহদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিভিন্ন বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে ইসতিসলাহ পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা উন্মোচিত হয়েছে এবং সমকালীন আইন ও সমাজব্যবস্থায় শরীআহর উদ্দেশ্য পূরণে এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রবন্ধটি ইসলামী আইনের মৌলিক উদ্দেশ্য ও আধুনিক প্রেক্ষাপটে শরীআহ-সমর্থিত সমাধানের একটি গ্রহণযোগ্য ভিত্তি হিসেবে ইসতিসলাহ পদ্ধতির বৈধতা প্রমাণে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।
বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার ও জীবনের অপরিহার্য উপাদান। কর্মসংস্থান ও আধুনিক জীবনের আকর্ষণে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত শহরমুখী হচ্ছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটছে। “বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বাংলাদেশের আইন ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ : পরিপ্রেক্ষিত ঢাকা” শীর্ষক প্রবন্ধে ঢাকা শহরের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় যেমন: বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণ, ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের দ্বিমুখী সমস্যা নিরূপণ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায়, প্রবন্ধটি পাঠের মাধ্যমে পাঠক বাসা ভাড়া সংক্রান্ত বহুমুখী জটিলতার একটি সম্যক চিত্র লাভ করবেন। এ প্রবন্ধে বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বাসাভাড়া ব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা এ খাতে ন্যায়সংগত সমাধান অনুসন্ধানে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও প্রবন্ধটি নীতিনির্ধারক, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের জন্য বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা প্রদান করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক আবাসন গঠনের পথ সুগম করবে বলেই প্রত্যাশা করা যায়।
আধুনিক আর্থিক লেনদেনের একটি জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত মাধ্যম হল ক্রেডিট কার্ড। এর মাধ্যমে গ্রাহক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এর কিছু বিষয় বৈধ এবং কিছু বিষয় অবৈধ। “ক্রেডিট কার্ড: শরয়ী দৃষ্টিকোণ” শীর্ষক প্রবন্ধে আধুনিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থার কাঠামো, কার্যপদ্ধতি ও এর মাধ্যমে সম্পাদিত লেনদেনসমূহ বিশ্লেষণ করে শরীয়তের আলোকে এর বৈধতা ও কার্যকারিতা আলোচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিচালিত সুদভিত্তিক লেনদেন, দেরি করলে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ এবং কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির শর্তাবলি সম্পর্কে শরীয়তের মৌলিক নীতিমালার আলোকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি এবং শরীয়তসম্মত আর্থিক লেনদেনের পথ অনুসন্ধানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
‘ইসলামী আইন ও বিচার’ জার্নালের ৮১তম সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিটি প্রবন্ধই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। এতে আধুনিক সময়ের ইসলামী চিন্তাধারা এবং সমসাময়িক বিষয়াবলি সুচারুভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রবন্ধগুলো বর্তমান ইসলামী গবেষণার বহুমাত্রিক দিক উন্মোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পাঠকদের জন্য এটি একাধারে জ্ঞানার্জনের মূল্যবান মাধ্যম এবং চিন্তাশীল চর্চার উৎস হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
মহান আল্লাহ এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
- প্রধান সম্পাদক
Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 2025 Abu Bakr Rafique Ahmad

This work is licensed under a Creative Commons Attribution 4.0 International License.