সম্পাদকীয়|Editorial

Authors

  • Muhammad Abdul Mabud Professor, Department of Arabic, University of Dhaka

DOI:

https://doi.org/10.58666/88bsd730

Abstract

[সম্পাদকীয়]
আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৬৫তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো। চলমান করোনা মহামারির এ সময়েও পৃথিবীর দিকে দিকে অন্যায়-অবিচারের সয়লাব। ন্যায়বিচার আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। অথচ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ স. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করে ঐতিহাসিক ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়ন করেন এবং মদীনা মুনাওয়ারাহ্কে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি নবগঠিত এ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর অন্যান্য বিভাগের ন্যায় বিচারবিভাগও প্রতিষ্ঠা করেন। যার অধীনে বাস্তবায়িত হয় পৃথিবীর প্রাচীন, পূর্ণাঙ্গ, লিখিত, প্রামাণ্য, সুগঠিত, মানবিক ও বাস্তবসম্মত বিচারব্যবস্থা। মহানবী স. ও পরবর্তীতে খিলাফাতে রাশিদার যুগ, উমাইয়া যুগ, আব্বাসীয় যুগ থেকে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় সালতানাতের পতনের সন্ধিক্ষণ পর্যন্ত একটানা সুদীর্ঘ প্রায় ১৩০০ বছরে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার সুবিশাল এলাকা এ শাসনের অধীনে চলে আসে এবং তারা ইসলামী বিচারব্যবস্থার সুফল লাভ করে। “ইসলামী বিচারব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো: একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে ইসলামী বিচারব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর নীতিমালা ও পদ্ধতিসমূহ আলোচনার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
কোনো ভূখণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সেখানে অবিচার, সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য স্থান করে নেয়। ইসলামী বিচারব্যবস্থার অনুপস্থিতি তাই বর্তমান দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ। এ সমস্যার সমাধানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থা নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। বিপরীত পক্ষে যে-কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার সক্ষমতা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রমাণিত। বিগত অর্থনৈতিক মন্দার সময় সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে এবং ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার উৎকৃষ্ট বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ পূর্ণ হলেও এখনো এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এমতাবস্থায় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রচলিত ব্যাংক তথা আর্থিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ইসলামী ব্যাংকিং-এর ভূমিকা ও যৌক্তিকতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকিং-এর ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধ। এতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকসমূহের ভূমিকা প্রসঙ্গে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ইসলাম এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বিধান দিয়েছে। ইসলামী উত্তরাধিকার আইন হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রবর্তিত মৃতের সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন ব্যবস্থাপনার শাশ্বত বিধান। এখানে ওয়ারিশদের বিভিন্ন শ্রেণি ও মৃতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল ব্যক্তির অধিকার যথাযথভাবে বর্ণিত হয়েছে। পুত্রের মতো কন্যা সন্তানও মীরাসী সম্পত্তির হকদার। বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে মীরাসী সম্পত্তি বণ্টনে সন্তান হিসেবে পুত্রের মতো কুরআনিক বর্ণিত হিস্সা অনুযায়ী কন্যা সন্তান সম্পত্তি পায় না। ফলে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার থেকে কন্যা সন্তান বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়ায় পুত্র ও কন্যা সন্তানের অংশ প্রাপ্তির প্রকৃতি ও বাস্তবতা অনুসন্ধান করার প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় এনে “বাংলাদেশে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কন্যা সন্তানের অধিকার প্রাপ্তির ধরন ও প্র্রকৃতি” শীর্ষক একটি গুণগত গবেষণা এ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। যাতে সাহিত্য পর্যালোচনার পাশাপাশি কেআইআই, ইনডেফথ ইন্টারভিউ, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন এবং কেইস স্টাডির অনুসরণ করা হয়েছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবন ধারণের জন্য পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পানি জীবজগতের জীবনধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু পানিদূষণের প্রভাবে মানুষ, পশু-পাখি, উদ্ভিদ সবকিছু হুমকির মুখে পড়ছে। এমনকি পরিবেশ দূষণের ফলে সম্ভাব্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ পানিদূষণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে ২০টিরও অধিক আইন/অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ পানিনীতি প্রণয়ন করেছে। ইসলামও পানিদূষণ প্রতিরোধে বিশেষ বিধান নির্ধারণ করেছে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যার এদেশে প্রচলিত পানিদূষণ প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনসমূহ ইসলামী নির্দেশনার আলোকে পর্যালোচনা করে জনসচেতনতা তৈরি ও নীতি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা তৈরির উদ্দেশ্য প্রণীত হয়েছে “পানিদূষণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে গৃহীত আইনি কাঠামো : পরিপ্রেক্ষিত ইসলামী নীতি ও নির্দেশনা” শীর্ষক প্রবন্ধ। আশা করা যায়, প্রবন্ধের সুপারিশ অনুযায়ী প্রচলিত আইনের সঙ্গে ইসলামী নির্দেশনার সমন্বয় করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন, আইনি সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে পানিদূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে।
ন্যায়বিচার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, উত্তরাধিকার, পানি আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা অবগত হওয়া ও তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন এ বিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণা। আর এ অধ্যয়নের সূচনা হতে হয় শিশুকাল থেকে। কেননা আজকের শিশুই আগামী দিনের সচেতন নাগরিক। শৈশবে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় এনে তাই সরকার প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ প্রকল্প। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমাম সাহেবদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া (ড্রপ-আউট) কিশোর-কিশোরী ও অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রকল্পে মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা, অংক, ইংরেজি, আরবী, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দান করছেন। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী অধিকাংশই সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। “শিশু-কিশোরদের ইসলামি শিক্ষা প্রদানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর পর্যালোচনা করে এর বৈশিষ্ট্যমূলক দিকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।
এ সংখ্যায় প্রকাশিত সবগুলো প্রবন্ধ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন এবং অন্যান্য সংখ্যার মতো এ সংখ্যাও সাদরে গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।

- প্রধান সম্পাদক

Published

2023-09-28

How to Cite

সম্পাদকীয়|Editorial. (2023). ইসলামী আইন ও বিচার | Islami Ain O Bichar, 17(65), 1-8. https://doi.org/10.58666/88bsd730

Most read articles by the same author(s)

<< < 1 2 3 4 > >>