সম্পাদকীয়|Editorial

Authors

  • Muhammad Abdul Mabud Professor, Department of Arabic, University of Dhaka

DOI:

https://doi.org/10.58666/scn5yk38

Abstract

আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৬৭তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো।
সমাজ হলো ইবাদাতের ক্ষেত্র। মানুষের মধ্যে তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাতভিত্তিক আকীদার পর সামাজিক আচরণের স্থান। কুরআন ও হাদীসের এক বিরাট অংশে ইসলামের সামাজিক বিধিবিধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সেসব বিধিবিধানের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল সামাজিক ও সামষ্টিক ব্যবস্থা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সামাজিক ও সামষ্টিক ব্যবস্থা ইসলামী জীবনদর্শনের নির্দেশনা এবং ঐক্য, সংহতি, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য, সাহায্য, সহযোগিতা ও পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে স্থাপিত। ইসলামী সমাজে মানুষের জীবন-সম্পদ, ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মানুষের সম্ভ্রম রক্ষা ও বংশধারা সংরক্ষণের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে যিনা-ব্যভিচারসহ সব ধরনের অবৈধ যৌনাচার। ইসলামে যিনা হারাম করার মাধ্যমে জারজ সন্তান জন্মদানের পথসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও কিছু সংখ্যক নর-নারীর অবৈধ যৌনমিলনের ফলে ব্যভিচারজাত সন্তান জন্ম লাভ করছে। এসব সন্তান সমাজে ঘৃণিত হওয়ায় সাধারণত গর্ভধারণ বা প্রসবের সাথে সাথে তাকে হত্যা করা হয়। অথচ অবৈধ গর্ভজাত সন্তানেরও পৃথিবীতে জন্মলাভ ও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। “ব্যভিচারজাত সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা ও অধিকার: শারী‘আহ্্ ও প্রচলিত আইনের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ” শীর্ষক প্রবন্ধে ইসলাম ব্যভিচারজাত সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, পরিচয়, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থান এবং উত্তরাধিকারসহ সার্বিক যে অধিকার সংরক্ষণ করেছে তার আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলামের সামাজিক আচরণ ও বিধি-নিষেধ পরিপালন না করায় সমাজে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে ধর্ষণ অন্যতম। ধর্ষণ নারীর প্রতি সহিংসতার এক ভয়াবহ রূপ। গ্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছে। উন্নত-অনুন্নত পৃথিবীর সব দেশেই নারীকে ধর্ষণ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। নারীরা বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, কর্মস্থল, সর্বত্র আক্রান্ত হচ্ছে। তিন বছরের শিশু থেকে শুরু করে আশি বছর বয়সী বৃদ্ধাও ধর্ষকামীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অথচ বিশ্বের সকল ধর্মেই ধর্ষণ নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। “ধর্মীয় আইনে ধর্ষণের শাস্তি : একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে ধর্ষণ বিষয়ে বিশে^র প্রধান প্রধান ধর্মের বিধান উল্লেখপূর্বক সেগুলোর তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে এবং সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।
ইসলামের সামাজিক আচরণ ও বিধি-নিষেধ পরিপালন না করার কুপ্রভাব স্বামী ও স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কেও বিস্তৃত হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যার, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের। বিবাহ বিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুসন্তান। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের ভবিষ্যত। তাদের লালনপালনের দায়িত্ব নিয়ে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়। অথচ ইসলামের পারিবারিক আইন ও প্রচলিত আইনে বর্ণিত সন্তান প্রতিপালনের বিধান বাস্তবায়িত হলে এ ধরনের সন্তানের বিকাশ ও বেড়ে ওঠা সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে। “হাযানাহ  ও প্রচলিত আইনে বিচ্ছেদ পরবর্তী সন্তানের প্রতিপালন : একটি পর্যালোচনা” প্রবন্ধে ইসলাম ও প্রচলিত আইনের আলোকে সন্তান প্রতিপালনের দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর ইসলামী ও প্রচলিত আইনের পর্যালোচনা করে এ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানকল্পে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
ইসলামী সমাজে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য সুনির্ধারিত। এরই ধারাবাহিকতায় এ সমাজে বসবাসরত অমুসলিম নাগরিকদের অধিকারও নির্ধারিত। তাদের অধিকারের মধ্যে ধর্মীয় অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধর্ম মানুষের আত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকারের অনুভূতি মানবহৃদয়ে প্রবলভাবে কার্যকর। শুধু তাই নয় বরং তা ক্ষেত্রবিশেষ ধর্মপ্রাণ মানুষের নিকট মৌলিক অধিকারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় অধিকারের বিষয়টি মানুষের নিকট স্পর্শকাতর বলেই ধর্মের জন্য মানুষ নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। ইসলাম মানুষের এ মৌলিক দিকটি গুরুত্ব প্রদান করে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার প্রদান করেছে। “ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার” শীর্ষক প্রবন্ধে কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনা, ইসলামের বিধি-বিধান ও প্রায়োগিক দৃষ্টান্ত প্রদানের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার বিষয়ে আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলামী সমাজ সুদৃঢ় ও ভারসাম্যপূর্ণ ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত। নৈতিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে সে ভিত্তি গড়ে ওঠে। মূল্যবোধ এমন এক আদর্শ যা মানুষের আচরণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে বাস করতে গিয়ে যা করা উচিত আর যা করা উচিত নয় বলে ব্যক্তির মধ্যে যে বোধ জাগ্রত হয় সেই বোধই মূল্যবোধ। পক্ষান্তরে নৈতিকতা বলতে কিছু মূলনীতি ও মানদ-কে বোঝায়, যা মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠন করে ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব মূলনীতি ও মানদ-ের ভিত্তিতে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম মানবজীবনে নৈতিকতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় নৈতিকতা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ কুরআন ও সুন্নাহ্য় প্রাধান্য পেয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহ্র স্পষ্ট বক্তব্যসমূহ থেকে নৈতিকতা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রসঙ্গে ইসলামি দর্শন ও শিক্ষা অনুধাবন করা যায়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ও ইসলাম চর্চায় অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সাধিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে সাধারণীকরণের মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়েছে “সমাজ-ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় : নোয়াখালী জেলার ওপর একটি সমীক্ষা” শীর্ষক প্রবন্ধে।
এ সংখ্যায় প্রকাশিত সবগুলো প্রবন্ধ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন এবং অন্যান্য সংখ্যার মতো এ সংখ্যাও সাদরে গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।

- প্রধান সম্পাদক

Downloads

Published

2023-09-28

How to Cite

সম্পাদকীয়|Editorial. (2023). ইসলামী আইন ও বিচার | Islami Ain O Bichar, 17(67), 1-8. https://doi.org/10.58666/scn5yk38

Most read articles by the same author(s)

<< < 1 2 3 4 > >>