সম্পাদকীয়|Editorial
DOI:
https://doi.org/10.58666/rwz0jj18Abstract
[সম্পাদকীয়]
আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৭১ ও ৭২তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো।
ইসলামী শরী‘আহ’র দৃষ্টিতে বৈধ কিছু বিষয় অবৈধ বিষয়ের দিকে ধাবিত করার সম্ভাবনা বহন করার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। অর্থাৎ শরী‘আহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজের দিকে ধাবিত করতে পারে বা সরাসরি নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হতে পারে- এ আশঙ্কায় শরী‘আহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজের দিকে ধাবিতকারী পথ বা মাধ্যমকেও নিষিদ্ধ সাব্যস্ত করা হয়, যাতে নিষিদ্ধ কাজটি সম্পাদিত হওয়ার সব পথ রূদ্ধ হয়ে যায়। শরী‘আহ এর এ মূলনীতিকে বলা হয় সাদ্দ-আয্-যারাঈ‘ বা ‘অকল্যাণ কিংবা মন্দ কাজের পথ রচনাকারী অনুমোদিত ও বৈধ উপায়-উপকরণগুলো বন্ধকরণ’। এটি মূলত ইসলামী আইনে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করে। যেমন একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ দুর্গবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাব্য সব উপায় প্রতিরোধ করে। ইসলামী আইনের প্রসিদ্ধ মাযহাবগুলো ‘সাদ্দ্ আয্-যারাঈ‘কে শরী’আতের সম্পূরক (পড়সঢ়ষবসবহঃধৎু) দলীল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাকাসিদুশ শরী‘আহ তথা ইসলামী আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সাদ্দ-আয্-যারাঈ‘ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিদগ্ধ ইমামগণ ইসলামী আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ মূলনীতি প্রয়োগ করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় দীনের হেফাজতের জন্যও এ নীতির ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। “বিদ‘আত থেকে দীনের সুরক্ষায় সাদ্দ্ আয্-যারাঈ‘ এর প্রয়োগ : একটি উসূলী বিশ্লেষণ” শীর্ষক প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইসলামী আইনের অন্যান্য শাখায়ও সাদ্দ্ আয্-যারাঈ‘ এর প্রয়োগের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেসব অবস্থা, পরিস্থিতি ও কারণে মানুষের মধ্যে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে সেসব পথ বন্ধ করেই শরীআতের বিধান প্রণীত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ‘শুফ্‘আ’ আইনের উল্লেখ করা যেতে পারে। শুফআ বা পার্শ্ব-জমি অগ্রক্রয় অধিকার হলো ইসলামী আইনের একটি ভূমি সংক্রান্ত উপ-আইন। ভূমি ব্যবস্থাপনায় শুফ্‘আ আইন-এর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, শুফ্‘আ আইন সংশ্লিষ্ট জমির সব ধরনের অংশিদার ও প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সা.-কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদীনা মুনাওয়ারাহ্ রাষ্ট্রে সর্বপ্রথম এ আইনের প্রায়োগিক সূচনা হয়। প্রায় ১৪০০ বছর এ আইন মুসলিম সাম্রাজ্যে নন্দিত ভূমি আইন হিসেবে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এ আইনের খুঁটিনাটি দিক নিয়ে রচিত হয়েছে “ভূমি ব্যবস্থাপনায় শুফ্‘আ আইনের ভূমিকা: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ” প্রবন্ধটি।
ইসলামী আইনের মূল প্রতিপাদ্য হলো, মানবতার জন্য ক্ষতিকর বিষয় অপসারণ ও কল্যাণ আনয়ন। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও তার টেকসই ফলাফল অর্জনের জন্য জ্ঞানার্জনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মহান আল্লাহ অনুগ্রহপূর্বক সকল সমস্যার সমাধানের আকর গ্রন্থ হিসেবে কুরআন মাজীদ নাযিল করেন। এ মহাগ্রন্থের প্রথম নির্দেশ ‘পড়ো’। কিন্তু সেই ‘পড়া’র পদ্ধতি কী হবে তা তিনি বলেননি। মহানবী সা. মহান আল্লাহর নির্দেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে মানবজাতির নিকট শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়ে একদল বিশ্বখ্যাত আলোকিত মানুষ তৈরি করেন। পরবর্তীকালে সেই শিক্ষাকে যুগের চাহিদার আলোকে মানুষের নিকট সহজলভ্য করার লক্ষে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব পদ্ধতির অন্যতম হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমন্বিত উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির শিক্ষার ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের নির্দেশনার আলোকে প্রণীত হয়েছে “ইসলামে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষার ধারণা : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধটি।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় মানবতার জন্য ক্ষতিকর বিষয় অপসরণ ও কল্যাণ আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণের মতো বিষয়ও এ থেকে বাদ পড়েনি। বরং পরিবেশ উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও এর বিপর্যয় রোধে ইসলাম বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের সাথে টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব ও সম্পর্ক বিশ্লেষণ এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ইসলামের বিধান ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের পর্যালোচনা করে “পরিবেশ উন্নয়নে ইসলামের নির্দেশনা ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে। প্রবন্ধ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, পরিবেশ উন্নয়নে আমাদের যে সকল সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা অনুধাবন করে এ থেকে উত্তরণের পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সমস্যাগুলো নির্ধারণ করে সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে একটি উত্তম ও টেকসই পরিবেশ সমৃদ্ধ নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
নিরাপদ ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ার জন্য আরও একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা। যাতে দেশে বসবাসরত কোনো নাগরিক কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন। সাম্প্রতিক যৌন হয়রানি বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, যানবাহনে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনেকেই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যাও করছে। অনেককে লেখা-পড়া বন্ধ করতে হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় বিভিন্ন আঙ্গিক বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে যৌন হয়রানির কারণ নির্ণয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। বিশেষত এ বিষয়ক ইসলামী নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি যৌন হয়রানি মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
আশা করি ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৭১ ও ৭২তম যুক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত ইসলামী আইনের উপযোগিতা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোর দ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন। মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
- প্রধান সম্পাদক
Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 2022 Muhammad Abdul Mabud
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 4.0 International License.