সম্পাদকীয়|Editorial
DOI:
https://doi.org/10.58666/cp26r195Abstract
[সম্পাদকীয়]
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে ত্রৈমাসিক ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৭৩তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো।
যাচাই বাছাইয়ের নানা ঘাট পেরিয়ে এ সংখ্যায় মোট ছয়টি প্রবন্ধ চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তন্মেধ্যে শুরুতে জায়গা পেয়েছে নারী গৃহকর্মীদের অধিকার বিষয়ক প্রবন্ধটি। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ও পরিবার চরম অর্থাভাবে জর্জড়িত। তাদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ- লেখাপড়া করানো সম্ভব হয় না। স্বাধীনভাবে আয়-উপার্জন ও অন্নবস্ত্রের সংস্থান করতে না পারায় বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক নারী ও মেয়ে শিশু শহরাঞ্চলের বিত্তবানদের বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবনধারণ করে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এসব নারী ও মেয়ে গৃহকর্মীদের সিংহভাগ হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পরও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না। শুধু পারিশ্রমিকই নয়, বহু ক্ষেত্রে তাদেরকে অমানবিক নিপীড়ন-নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বাংলাদেশের নারী ও শিশু অধিকার আইনে সকল নিপীড়ন-নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলেও অহরহ গৃহকর্মী নির্যাতন এমনকি মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরীহ অসহায় গৃহকর্মীরা তাদের উপর কৃত পাশবিক নির্যাতনের কোনো প্রতিকার পায় না। গৃহকর্তাদের এরূপ অমানবিক আচরণের পেছনে রয়েছে নৈতিক অধপতন ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব। “বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার : ইসলামী দিক-নির্দেশনা” শীষর্ক প্রবন্ধে ইসলামের আলোকে গৃহকর্মীদের অধিকার ও তাদের সুরক্ষার দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব দিক-নির্দেশনা আইন সংশ্লিষ্ট মহল ও গৃহকর্তাগণ বিবেচনায় নিলে আশা করা যায় তা গৃহকর্মী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জনস্বার্থে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজে সরকার কর্তৃক সাধারণ নাগরিকদের মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়। বাংলাদেশে ভূমি অধিগ্রহণের বহুল চর্চা রয়েছে। কিন্তু প্রায়শই এক্ষেত্রে ভূমি মালিকদের অধিকার খর্ব করা হয় এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে অসংগতি দেখা যায়। “জনস্বার্থে রাষ্ট্রকর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ : প্রচলিত ও ইসলামী আইনের তুলনামূলক পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে জনগণের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমি অধিগ্রহণ নীতি অনুসরণ করলে আশা করা যায়, সরকার ও জনগণ উভয়পক্ষের স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
পবিত্র কুরআনের পরই ইসলামী বিধানের অন্যতম উৎস হিসেবে হাদীসের অবস্থান। হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি বিচারের নানা পদ্ধতি ইতোমধ্যে চর্চিত হচ্ছে, গড়ে উঠছে স্বতন্ত্র শাস্ত্র। তন্মধ্যে হাদীসের মূল ইবারত তথা (Text) এর অর্থ বিচারে হাদীস গ্রহণ ও বর্জন একটি শাস্ত্রীয় পদ্ধতি। “অর্থবিচারের হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণে হাদীসপন্থি ও আধুনিক চিন্তকদের কর্মপদ্ধতি : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে শাস্ত্রীয় আলোচনা করে পূর্বেরকার মুহাদ্দিসীন ও আধুনিক চিন্তকদের মধ্যে হাদীস পর্যালোচনার পথ ও পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। হাদীস সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধিৎসুদের জন্য এ প্রবন্ধে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, আশা করি তাঁরা এটির দ্বারা উপকৃত হবেন।
অপচয় একটি গর্হিত ও নিন্দিত কাজ। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র যেকোনো পর্যায়েই হোক না কেন, অপচয় দুর্ভিক্ষ, বিপর্যয় ও দারিদ্র্য টেনে আনে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় নানা অপচয় ও অপব্যয়ের ঘনঘটা দেখা যায়। এটা রাষ্ট্রের জন্য সমূহ বিপদের কারণ এবং যেকোনো মুসলিমের আখেরাতের পরিণতির জন্য আশঙ্কাজনক। মহান আল্লাহ অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কঠোরভাবে সতর্ক করে অপব্যয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন। এই অনাচার থেকে ব্যক্তি, দেশ ও জাতি যাতে বেঁচে থাকতে পারে তারই আলোচনা রয়েছে “প্রচলিত ও ইসলামী আইনের আলোকে অপচয়ের বিধান : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রবন্ধে।
আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার মধ্যেই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুদের উপর অকথ্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। যার ফলে তাদের জীবনে পূর্ণতা আসেনা। শিশু নির্যাতন রোধে বাংলাদেশে আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়না। ইসলাম শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। শিশুরা যাতে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে সেজন্য ইসলাম মা-বাবা, সমাজ ও রাষ্টের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। “শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন ও ইসলামের দিকনির্দেশনা” শীর্ষক প্রবন্ধে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে যা অনুসৃত হলে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
জুয়া সব সমাজেই একটি ঘৃণ্য ও মন্দ কাজ। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে এটিকে ‘শয়তানের কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। “ইসলাম ও প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে জুয়া : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে জুয়ার শরয়ী বিধানসহ সমাজে এর ক্ষতিকর দিকগুলো উপস্থাপন করে এ থেকে বেঁচে থাকার উপায় বর্ণিত হয়েছে। ইসলামের বিধানাবলীর আলোকে জুয়াকে প্রতিরোধ করা হলে আমাদের সমাজ থেকে অনেক অনাচার হ্রাস পাবে।
ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৭৩তম সংখ্যার প্রবন্ধগুলো আশা করি সকলের কাছে সমাদৃত হবে। মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
- প্রধান সম্পাদক
Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 2023 Muhammad Abdul Mabud
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 4.0 International License.