সম্পাদকীয়|Editorial
DOI:
https://doi.org/10.58666/7m7msf02Abstract
[সম্পাদকীয়]
আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৬৮তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো।
আমাদের উপর মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ যে, তিনি ইসলামী আইনের বিভিন্ন উৎস নির্ধারণ করেছেন। যার মাধ্যমে ইসলাম একটি গতিশীল, বিশ্বজনীন, নতুন নতুন ঘটনা প্রবাহে এগিয়ে চলা মানুষের জীবনের সকল দিককে অন্তর্ভুক্তকারী ব্যবস্থা হিসেবে প্রমাণিত হয়। বাস্তবিক পক্ষে রাসূলুল্লাহ #-এর ইন্তিকাল ও অহীর ধারা বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম যুগের বিবর্তনে আজও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম। ইসলামী আইনের উৎস দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত অহীর উৎস, অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ, যাকে নস হিসেবে নামকরণ করা হয়। দ্বিতীয়ত যেসব উৎস সরাসরি অহী নয় অর্থাৎ ইজতিহাদী উৎস। যেমন ইজমা, কিয়াস, ইসতিহসান, মাসালিহ মুরসালাহ, ইসতিসহাব ইত্যাদি। ইসলামী আইনের মূলনীতিশাস্ত্র অনুযায়ী এসব সম্পূরক উৎসসমূহ আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বরং এমন অনেক সমসাময়িক বিষয় রয়েছে এসব সম্পূরক উৎসের মাধ্যমে ছাড়া যার সমাধান করা দুষ্কর হয়ে যায়। ইসতিসহাব তেমনই একটি সম্পূরক উৎস ইসলামী ফিকহের সব মাযহাবেই যাকে আইন প্রণয়নের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। “ইসতিসহাবের আইনী মর্যাদা ও এর প্রায়োগ : একটি বিশ্লেষণ” শীর্ষক প্রবন্ধে ইসতিসহাবের পরিচয়, প্রামাণিকতা, প্রয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ইসলামী আইন সব সমাজের উপযোগী হওয়ার অন্যতম প্রমাণ হলো, এ আইনে ছোট বড় আধুনিক সব বিষয়ের বিধান ও সমস্যার সমাধান বিদ্যমান রয়েছে। যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো সমসাময়িক বিষয়ের বিধানও এ আইনে রয়েছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে সমগ্র বিশে^র জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বায়ুম-লে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ও মিথেন গ্যাস ছড়ানোর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশলগুলোর মধ্যে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ওডগ) একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য কৌশল হিসেবে বিবেচিত। “সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কৌশল : ইসলামের আলোকে একটি পর্যালোচনা” প্রবন্ধে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপাদানগুলোর সঙ্গে ইসলামের সংশ্লিষ্ট বিধান তুলনামূলকভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ইসলামী আইন পরিপূর্ণ ও সমাজের সব শ্রেণির মানুষের স্বার্থরক্ষাকারী হওয়ায় জীবনঘনিষ্ঠ যাবতীয় বিষয়ের সমাধান উপস্থাপন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষায়ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাতে জীবনের এ ক্রান্তিকালে প্রবীণদের অযাচিত অবহেলার শিকার হতে না হয়। অথচ আমাদের সমাজে প্রবীণগণ নানাভাবে অবহেলিত ও উপেক্ষিত। সঙ্গত কারণে একজন প্রবীণ তার ব্যস্তময় কর্মজীবনের অবসর অথবা শারীরিক দুর্বলতার কারণে যখন গৃহে অবস্থান করেন তখন সন্তান-সন্ততি ও স্বজনদের নিকট সর্বতোভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কারণ স্বাভাবিকভাবে এ বয়সে তাদের শারীরিক সক্ষমতা লোপ পায় এবং জীবনের এ সন্ধিক্ষণে তাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ-কর্মে অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অথচ বর্তমান সমাজে অনেক প্রবীণকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে জীবনাতিপাত করতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রবীণের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও প্রবীণের অধিকার সুরক্ষায় “জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা, ২০১৩” অনুমোদনসহ বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছে। “ প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষা : শরীআহ্ ও প্রচলিত আইনের আলোকে পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে প্রবীণদের অধিকার বিষয়ে ইসলামী আইন ও প্রচলিত আইনের তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলামী আইনের গ্রহণযোগ্যতার আরেকটি কারণ হলো, বিধিবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতার আশ্রয় ও বাস্তবিক অবস্থার মূল্যায়ন। এজন্য কেউ এ কল্যাণকর বিধান অমান্য করলে তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। কতিপয় অপরাধের শাস্তি সুনির্দিষ্ট হলেও এমন কিছু অপরাধ আছে যেগুলোর শাস্তি ইসলামী আইনে নির্দিষ্ট করা হয়নি। এ ধরনের অনির্ধারিত শাস্তিকে তাযীর বা সাধারণ শাস্তি বলা হয়। ইসলামী শাস্তি বিধানের মধ্যে তাযীর তথা সাধারণ শাস্তি একটি অন্যতম অপরাধ প্রতিরোধক বিধান। তাযীর পর্যায়ের শাস্তিসমূহের ক্ষেত্র বিশাল। এটি হদ্দ বা কিসাসের ন্যায় নির্দিষ্ট কোন শাস্তির সাথে সম্পৃক্ত নয়। এক্ষেত্রে বিচারক আসামীকে স্থান, কাল, পাত্র ও প্রেক্ষাপট ভেদে কৃত অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেকোনো শাস্তি দিতে পারেন। তবে এ শাস্তির উদ্দেশ্য হতে হবে সামষ্টিক কল্যাণ, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা কায়েম করা এবং সর্বপ্রকার যুল্ম ও সামাজিক অনাচার প্রতিহত করা। সমাজের অপরাধ প্রবণতা হ্রাসকল্পে তাযীরী শা¯িরÍ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে বিবেচনায় এনে “ইসলামী আইনে তা‘যীর” শিরোনামে এর পরিচিতি, প্রামাণিকতা, প্রকারভেদ, যৌক্তিকতা ও দর্শন আলোচনা করে এই প্রবন্ধ প্রণীত হয়েছে।
ইসলামী আইন সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য। এ আইনে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে খাদ্য এবং পোশাকের মতো নিরাপদ আবাসন পাবার অধিকার। সঠিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির জন্য অনেক সময় গৃহ থেকেই শুরু হয় অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অপরাধ, পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার মত নানান অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা-। তাই মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের জন্য গৃহ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা প্রদান করেছে। জীবনযাত্রার পরিমাণগত ও গুণগত মানের সন্নিবেশ ঘটিয়ে প্রচলিত পন্থায় কিভাবে নমনীয় গৃহ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা যায় ইসলাম সেশিক্ষা তুলে ধরেছে। এ গুরুত্বকে বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের সমাজবদ্ধ মানুষের বাস্তব জীবনে গৃহ ব্যবস্থাপনায় ইসলামী দিকনির্দেশনা প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে “গৃহ ব্যবস্থাপনায় ইসলামী দিকনির্দেশনা : একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক প্রবন্ধে।
আশা করি ইসলামী আইন ও বিচার জার্নালের ৬৮ তম সংখ্যায় প্রকাশিত ইসলামী আইনের উপযোগিতা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোর দ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন। মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
- প্রধান সম্পাদক
Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 2022 Muhammad Abdul Mabud
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 4.0 International License.