মুসলিম বিচারশাসনে মাজালিম আদালতের (ন্যায়পাল) ধারণা ও প্রয়োগ: এক ঐতিহাসিক অনুসন্ধান|The Concept and Application of Maẓālim Courts (Ombudsman) in Muslim Administration of Justice: A Historical Inquiry

Abstract

In Islamic history, the independent judicial structure that emerged at various stages of the long Muslim rule, traversing beyond the limits of the conventional judicial process, in order to protect the common people from the wrongdoings of state officials and influential groups, is known as the ‘Maẓālim Court’. Although scattered forms of the Maẓālim Court are found in various forms from the Prophetic era to the Umayyad era, researchers generally agree that the full institutional development of the Maẓālim Court took place during the Abbasid era. In particular, the theoretical basis of the Maẓālim Court is presented in a comprehensive manner in the renowned book “al-Aḥkām al-Sulṭāniyyah” authored by Imam al-Māwardī (d. 1058 AD), where he describes its nature, boundaries, and procedures in detail. Authors and researchers of latter period have mainly relied on the aforementioned work of al-Māwardī. Modern Western researchers have also paid special attention to the Maẓālim Court in order to comprehend the nature and process of the judicial system of Muslim rulers. Their writings and research have yielded a lot of valuable information and thoughtful analysis. However, due to the differences in the epistemological framework, their conclusions have often differed from the views of Muslim scholars. Keeping this in mind, the present article presents the practical details of the Maẓālim Court in the light of history. The article demonstrates that the Maẓālim Court is not only a symbol of state order and political authority, but also a crucial manifestation of the Islamic concept of justice. It was an institution that played an effective role in protecting the rights of the common people, ensuring the accountability of those in power, and strengthening social justice. In addition, this judicial structure is not only a matter of historical curiosity but is also very relevant in the discussion of contemporary justice and administrative accountability.

সারসংক্ষেপ: সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনামলের বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অন্যায় আচরণ থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষার তাগিদে প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়ার সীমা অতিক্রম করে যে স্বতন্ত্র বিচার কাঠামোর উদ্ভব ঘটেছিল, ইসলামী ইতিহাসে তা ‘মাজালিম আদালত’ নামে পরিচিত। নববি যুগ থেকে শুরু করে উমাইয়া যুগ পর্যন্ত মাজালিম আদালতের বিক্ষিপ্ত রূপ পাওয়া গেলেও গবেষকগণ সাধারণভাবে এ বিষয়ে একমত যে, মাজালিম আদালতের পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ ঘটে আব্বাসিয় শাসনামলে। বিশেষত মাজালিম আদালতের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুসংহতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ইমাম আল-মাওয়ার্দি রহ. (মৃ. ১০৫৮ খ্রি.) রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-আহকাম আল-সুলত্বানিয়্যাহ’-তে, যেখানে তিনি এর প্রকৃতি, সীমারেখা ও কার্যপ্রণালী বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী সময়ের লেখক ও গবেষকগণ মূলত আল-মাওয়ার্দির উক্ত রচনার উপরই নির্ভর করেছেন। মুসলিম শাসকদের বিচারব্যবস্থার ধরন ও প্রক্রিয়া অনুধাবনের জন্য আধুনিক পশ্চিমা গবেষকগণও মাজালিম আদালত বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। তাঁদের রচনা ও গবেষণায় বহু মূল্যবান তথ্য ও চিন্তাশীল বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। তবে জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামোর পার্থক্যের কারণে তাঁদের উপসংহার অনেক সময় মুসলিম আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ভিন্নতর হয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে মাজালিম আদালতের প্রায়োগিক বিবরণ ইতিহাসের আলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে যে, মাজালিম আদালত কেবল রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রতীক নয়, বরং ইসলামের ন্যায়বিচার ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। এটি ছিল এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা সাধারণ মানুষের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বোধ সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি এই বিচার কাঠামো কেবল ঐতিহাসিক কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং সমসাময়িক ন্যায়বিচার ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা সম্পর্কিত আলোচনায় তা খুবই প্রাসঙ্গিক।